মডিউল - ৫
মাদকাসক্তি ও এর প্রতিকার ও ব্যবস্থাপনা
মাদক দ্রব্য
যে সব দ্রব্য সেবন করলে মানষের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উপর ক্ষতিকর প্রভাব পরে এবং আসক্তি জন্মে সেগুলোই মাদক দ্রব্য। মাদক সরাসরিভাবে মস্তিষ্কে কাজ করে এবং এর ফলে মানষের চিন্তা, অনুভূতি এবং আচরণের উপর নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটায়।
মাদকের ধরণ
মাদক বিভিন্ন ধরণের হতে পারে, যেমনঃ সিগারেট, বিড়ি, তামাক, চুরুট, মদ, গাঁজা, গুল, ঘুমের ঔষধ, কফ সিরাপ, হেরোইন, ইয়াবা ইত্যাদি।
মাদকাসক্তির কারণ
কৌতুহলের কারণে মানষ অনেক সময় মাদকাসক্ত হতে পারে, হতাশাগ্রস্থ হওয়ার ফলে, মাদককে জীবন উপভোগ করার জিনিস মনে করা, দারিদ্রতা, কর্মগতভাবে কাজে ব্যর্থ হওয়া, পারিপার্শ্বিক অবস্থা, সম্পর্কের ক্ষেত্রে সমস্যা, মানসিক চাপ, রাগ, বেকারত্ব, অর্থনৈতিক সমস্যা, বন্ধুদের চাপে পড়ে মাদক নেয়া যেমনঃ বন্ধুরা অনেক সময় বলতে পারে যে “আমরা এখন বড় হয়েছি তাই আমরা মাদক নিতেই পারি” ইত্যাদি কথাবার্তার মাধ্যমে মাদক নিতে উৎসাহ দিতে পারে। বন্ধুরা এধরনের কথা বললেও মাদক গ্রহণ করা যাবেনা।
মাদক এ আসক্তির লক্ষণ
- দৈনন্দিন এবং সাধারণ কাজকর্ম থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়া
- সময়মত কাজ সম্পন্ন করতে না পারা
- মানসিকতার দ্রুত পরিবর্তন হয়
- প্রচুর মিথ্যা কথা বলা
- কথায় কথায় অন্যদেরকে দোষারোপ করা
- দৈনন্দিন কাজে আগ্রহের অভাব
- কথায় অসংলগ্নতা
- অন্যদের সাথে যোগাযোগ করার দক্ষতার অভাব
- বিরক্তি
- কথা দিয়ে কথা না রাখা
- অপরাধবোধ
- আবেগের অস্থিতিশীলতা (হঠাৎ খুব রেগে যাওয়া)
- ঘুম ঘুম ভাব/ঝিম ধরা ভাব
- অতিরিক্ত কথা বলা অথবা একেবারেই কথা না বলা
- ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন
- আচরণের জন্য কারণ দর্শানো
- উদ্বেগ (Anxiety)
- বিষণ্ণতা (Depression)
- একা থাকা ইত্যাদি
মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব
মাদকাসক্ত ব্যক্তি মনে করে তারা মাদককে খুব সহজেই ছেড়ে দিতে পারবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, মাদকদ্রব্য সেবনের ফলে, মাদকের প্রতি তীব্র আকর্ষণ সৃষ্টি হয় তাই তারা মাদকদ্রব্য ছাড়তে পারেনা। ফলে তাদের মাদকদ্রব্য গ্রহণের পরিমান দিনে দিনে বৃদ্ধি পায়। কোন কারণে মাদকদ্রব্য সেবন করতে না পারলে, মাদকের অভাবে বিভিন্ন ধরণের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। যেমন:
- মাদক গভীর অনুভূতিকে নষ্ট করে দেয়
- জ্ঞান ও স্মৃতি শক্তি কমে যায়
- শরীরে এবং মনে বিভিন্ন ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টি করে
- মাদক গ্রহণের ফলে খাদ্যনালী ও শ্বাসনালীর ক্যান্সার হতে পারে, ব্লাড প্রেশার হতে পারে, হার্টের অসুখ হতে পারে
- নেশাগ্রস্থ ব্যক্তির ওজন দ্রুত কমে যায়
- মেজাজ খিটখিটে হয়
- ভুল দেখা, ভুল শোনা এবং নিজের প্রতি উচ্চ বা নিম্ন ধারণা তৈরি হতে পারে
- কথায় কথায় মানুষকে সন্দেহ করতে পারে
- আচরণ আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে (যেমনঃ মারামারি করে, অনেক সময় মাদকাসক্ত মানুষ তার পরিবারের সদস্যদেরকে খুন ও করে ফেলতে পারে)
- ক্ষুধা নষ্ট হয়ে যায়
- ঘুমের সমস্যা হয়
- প্রতিনিয়ত একটা নির্দিষ্ট সময়ে জ্বর আসতে পারে
- মাদকাসক্ত মানুষ পড়ালেখার ক্ষমতা এবং কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে
- আত্মসম্মানবোধ নষ্ট হয়ে যায়
- মারাত্মক অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পরে (যেমন : চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুন ইত্যাদি)
- বাবামা যদি মাদকাসক্ত হন তাহলে বিকলাঙ্গ বা স্বল্প বুদ্ধিসম্পন্ন সন্তান জন্ম হতে পারে
মাদক প্রতিরোধের উপায়
- যেসব বন্ধুরা মাদক গ্রহণে উৎসাহ যোগায় অথবা সহযোগিতা করে তাদের থেকে দূরে থাকা
- কোন কারণে মন খারাপ থাকলে Relaxation Exercise করা (Reference: মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনার Relaxation Exercise)
- যেসব ছাত্রছাত্রী একবার অথবা একাধিকবার কিছুটা মাদক নিয়েছে যেমন কোন ছাত্রছাত্রী হয়তোবা কখনও সিগারেট খেয়েছে এবং এখন তার আবার খেতে ইচ্ছে করছে সেই মহূর্তে সে পানি, চকলেট বা অন্য কিছু খেতে পারে
- মাদক কে “না” বলা
নিজের সাথে প্রতিজ্ঞা করা
১) আমরা নিজেকে ভালোবাসবো
২) আমরা পরিবার, সমাজ ও দেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হিসেবে অবদান রাখার জন্য আজ থেকে আমরা সবাই মাদককে “না” বলবো
৩) “আমরা কখনই মাদক গ্রহণ করবোনা, আমরা কখনই মাদক গ্রহণ করবোনা, আমরা কখনই মাদক গ্রহণ করবোনা ” (সবাই মিলে একসাথে তিনবার বলবে)