img img img কৈশোরকালীন স্বাস্থ্য
  • চলো জানি
    আইইসি ম্যাটেরিয়ালস সমীক্ষা ও সম্মেলন জ্ঞানের কথা গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক সচরাচর জিজ্ঞাসা
  • প্রশিক্ষণ
  • ভিডিও
  • সেবা
  • তথ্য বিশ্লেষণ
  • নীতিমালা
  • বাং EN
Sign-Up Form
Login Form

Not a member, please Sign-Up first

কোর্স জেনারেল কোর্স

মডিউল - ২

  • পিপিটি
  • পিডিএফ
  • টেক্সট
  • ভিডিও
  • কুইজ খেলুন
মডিউল - ২

বয়সন্ধিকাল, কৈশোরকালীন শারীরিক পরিবর্তন এবং

কৈশোরকালীন মনোসামাজিক জটিলতাসমূহ 

·        বয়ঃসন্ধিকাল কি ও কখন শুরু হয়?

একটি শিশু জন্মের পর থেকেই ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। একটা বয়সে হঠাৎ তার মধ্যে কিছু  পরিবর্তন দেখা যায় যেমন বেশ লম্বা হওয়া, গলার স্বর পরিবর্তন হওয়া, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চুল গজানো, অধিক স্বাধীনচেতা মনোভাব, অধিক দায়িত্ব অন্বেষ করা, ঝুঁকিগ্রহণমূলক আচরণ ইত্যাদি। এইসময় তাদেরকে ছোটদের দলে ফেলা যায় না আবার বড়দের দলেও ফেলা যায় না। এই সময়টাকেই বয়ঃসন্ধিকাল বলে।

সাধারতঃ ১০ থেকে ১৯ বছর বয়স পর্যন্ত সময়টাকে বয়ঃসন্ধিকাল হিসেবে ধরা হয়। 

·        সামাজিক পরিবর্তনসমূহ 

o   ব্যক্তিগত পরিচয় অনুসন্ধান করা

o   অধিক স্বাধীনচেতা মনোভাব

o   অধিক দায়িত্ব অন্বেষ করা

o   ঝুঁকিগ্রহণমূলক আচরণ

o   সম্পর্কজনিত বিষয়

·        কৈশোরকালীন মনোসামাজিক পরিবর্তন

কৈশোরকালীন সময়ে কিশোরকিশোরীদের মাঝে বিভিন্ন ধরণের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। পরিবার, বন্ধু এবং সমবয়সীদের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও নানা ধরণের ভিন্নতা প্রকাশ পায়। কারণ , প্রত্যেক কিশোর কিশোরীর মনোসামাজিক বিকাশ ভিন্ন; এক্ষেত্রে গুরুত্বর্পূ উপাদান হিসেবে জিনগত বৈশিষ্ট্য, মস্তিষ্কের বিকাশ, অভিজ্ঞতা ছাড়াও চারপাশের পরিবেশ (পরিবার, বন্ধু, সমাজ, কৃষ্টি) ইত্যাদিও বিশেষভাবে প্রভাব বিস্তার করে। মনোসামাজিক পরিবর্তনের মাধ্যমে কিশোরকিশোরীদের মাঝে আত্মনির্ভরশীলতা এবং পরিণত বয়সের বৈশিষ্ট্যগুলো ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়।

·        আবেগ জনিত/আবেগীয় পরিবর্তনসমূহ 

o   নিম্ন আত্মসম্মানবোধ 

o   আবেগীয় সমস্যা (অত্যধিক রাগ, নিরাপত্তাহীনতা, উদ্বেগ, চাপ, হতাশা, বিষন্নতা)

o   প্রত্যাহার মূলক মনোভাববিদ্রোহী আচরণ

o   সামাজিক পরিবর্তন

১) ব্যক্তিগত পরিচয় অনুসন্ধান করা

এই বয়সে কিশোর কিশোরীরা অন্যের কাছে কিভাবে নিজেদের পরিচয় তুলে ধরবে সে ব্যাপারে অধিক সচেতন থাকে। এই সময়ে তাদের মনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জাগে; যেমন ‘আমি কে?’ ‘আমি কী করতে পারি?’ এই বয়সে তারা তাদের “লিঙ্গভিত্তিক” পরিচয় সর্ম্পকেও সচেতন হয়। যেহেতু এটি একটি পরিবর্তনশীল (Transition) পর্যায়, তাই এই সময়ে অনেকে আত্মপরিচয় সংকটে ভোগে। কারণ, সমাজ  তাদের কাছ থেকে ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা প্রত্যাশা করে। কিন্তু প্রতিটি কিশোরকিশোরীর নিজস্ব কিছু চাহিদা থাকে। কাজেই সমাজের প্রত্যাশিত চাহিদাগুলো পূরণ করতে গিয়ে কিশোরকিশোরীরা কিছু সংকটে ভোগে।

২) অধিক আকাঙ্খা দায়িত্ব পাওয়ার

কৈশোরকালীন সময়ের অন্যতম গুরুত্বর্পূ কাজ হল দক্ষতা শেখা যা তাদেরকে ভবিষ্যতে নিজের জীবন ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করে এবং তাদেরকে অধিক দায়িত্বশীল করে গড়ে তোলে। এই দায়িত্ববোধ তৈরি হওয়ার পেছনে পরিবার ও সমাজের অন্যান্য সদস্যরা মূখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। এই বয়সে কিশোরকিশোরীরা নিজেদের বাড়ী এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিনড়ব দায়িত্ব গ্রহ করতে আগ্রহী হয়। যে সকল কিশোরকিশোরীরা পরিবার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব পালনের সযোগ পায়, পরবর্তীতে তাদের মধ্যে নেতৃত্বমূলক গুণাবলীর বিকাশ ঘটে।

৩) ঝুঁকিগ্রহণমূলক আচরণ

এটি এমন একটি সময় যখন কিশোরকিশোরীরা অধিকতর চ্যালেঞ্জিং কাজের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে যা অনেক ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ। তারা অনেক ক্ষেত্রেই সীমা অতিক্রম করে ফেলে এবং পরণতির কথা চিন্তা না করেই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ সম্পাদনের চেষ্টা করে। যেমন অনেক কিশোরকিশোরীর মধ্যেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উচ্চগতিতে মোটরবাইক কিংবা গাড়ী চালানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এক্ষেত্রে রোমাঞ্চকর অনুভূতি উপভোগ করার জন্য এমন অনেক কাজ করে যেখানে জীবনের ঝুঁকি থাকতে পারে।

৪) স্বাধীনচেতা মনোভাব

এই বয়সে কিশোরকিশোরীদের মধ্যে স্বাধীনচেতা মনোভাব গড়ে ওঠে। ভবিষ্যতে তাদের পেশা, পারস্পরিক সম্পর্ক, পরিবার পরিজন ইত্যাদি কেমন হতে পারে; সে সম্পর্কে ভাবতে শরু করে। প্রতিটি কিশোরকিশোরী ভবিষ্যতে সমাজে তার একটি স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করার কথা চিন্তা করে। এই সময়ে অনেক কিশোরকিশোরী তাদের স্বাধীনতার অপব্যবহার করতে পারে, যেমন কিশোর অপরাধে জড়িত হওয়া, মাদকাসক্ত হওয়া ইত্যাদি। এই সময়ে কিশোরকিশোরীদেরকে তাদের বয়সোপযোগী স্বাধীনতা প্রদান করা হলে ভবিষ্যতে তারা স্বনির্ভরশীল ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। অপরদিকে অধিক রক্ষণশীল পরিবারে বেড়ে ওঠা এবং কম স্বাধীনতা প্রাপ্ত কিশোরকিশোরীদের মধ্যে স্বনির্ভরশীলতা ও আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

৫) সর্ম্পকজনিত বিষয়াবলী

কৈশোরকালে চিন্তামূলক ও আবেগীয় পরিপক্কতা লাভের ফলে সম্পর্কের ধরনে পরিবর্তন হয়। সম্পর্কের এই ধরনের পরিবর্তন পিতামাতা,বন্ধুবান্ধব, শিক্ষকশিক্ষিকা সকলের ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়। চিন্তনমূলক বিকাশের ফলে কিশোরকিশোরীদের মধ্যে অন্যের চাহিদা, প্রত্যাশা, অনুভূতি বোঝার ক্ষমতা বেড়ে যায়। আবেগীয় পরিপক্কতা লাভের ফলে তারা অধিক আন্তরিক ও বিশ্বস্ত সর্ম্পক গড়ে তুলতে পারে। এ সময়ে কিশোরকিশোরীরা তাদের পোশাকপরিচ্ছদ, বন্ধুবান্ধব ও অন্যান্য বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিজের মতামতকে প্রাধান্য দিতে চায় যা অনেক পিতামাতা মেনে নিতে চান না, ফলে উভয়ের মধ্যে দ্বন্দের সৃষ্টি হয়। অনেক কিশোরকিশোরী তার নিজের পরিবারের সদস্যদের সাথে ঔদ্ধত্যমূলক আচর প্রকাশ করে থাকে। এসময় বন্ধুদের সাথে অধিক আন্তরিক ও বিশ্বস্ত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এমন অনেক বিষয় আছে যা পিতামাতার সাথে আলোচনা করতে পারে না কিন্তু বন্ধুদের সাথে খুব সহজেই আলোচনা করতে পারে।

·        আবেগীয় পরিবর্তন

১) আত্মসম্মানবোধ

আত্মসম্মানবোধ হল একজন ব্যক্তির নিজস্ব গুণাবলী, যোগ্যতা, দক্ষতা ইত্যাদি সম্পর্কিত আত্মমূল্যায়ন। আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন ব্যক্তি নিজের সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করে। তারা মনে করেন যে, তারা যোগ্য ব্যাক্তি এবং জীবনে অন্যদের ভালবাসা ও সমর্থন পাওয়ার যোগ্য। এ ধরনের ব্যক্তির পক্ষে জীবনে সফলতা অর্জন করা সহজ হয়। অপরপক্ষে নিম্ন আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন ব্যক্তির নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে। তারা মনে করেন তারা অন্যের ভালবাসা ও সমর্থন পাওয়ার অযোগ্য। এই ধরনের মানষের পক্ষে বা এ ধরনের ব্যক্তির পক্ষে জীবনে সফলতা অর্জন করা কষ্টকর। 

কিশোর বয়সে অনেক ছেলেমেয়েদের মধ্যে নিম্ন আত্মসম্মানবোধ পরিলক্ষিত হয়। তাদের মধ্যে নিম্ন লিখিত বৈশিষ্ট্যসমূহ দেখা যায়-

নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারা পোষণ করা, যেমন নিজেকে অসুন্দর, অপছন্দনীয়, অযোগ্য ইত্যাদি মনে করা

o   নিম্ন আত্মসম্মানবোধে ভোগা

o   নতুনত্ব এড়িয়ে চলা, পরিবর্তনকে সহজে মেনে নিতে না পারা

o   নিম্ন আত্মবিশ্বাসে ভোগা, কোন কাজ শুরু করার আগেই নিজেকে অপারগ মনে করা

o   নতুন বন্ধুত্ব তৈরি করা ও বজায় রাখার ক্ষেত্রে নিজেকে অযোগ্য মনে করা

o   নিজের প্রাপ্তিকে সার্বিকভাবে মূল্যায়ন না করা এবং সবসময় মনে করা, আরো ভালভাবে কাজটি সম্পাদন করা যেত

o   নিজেকে অন্যের দ্বারা নিপীড়িত মনে করা

o   সর্বদা নিজেকে বন্ধুদের সাথে তুলনা করা এবং নিজেকে বন্ধুদের চাইতে কম যোগ্যতা সম্পন্ন  মনে করা

২) আবেগীয় সংকট

কৈশোরকাল এমন একটি সময় যখন শারীরিক ও মানসিক পরিবতর্নের কারণে কিশোরকিশোরীরা বিভিন্ন আবেগীয় সমস্যা অনুভব করে; যেমন অত্যধিক রাগ, নিরাপত্তাহীনতা, উদ্বেগ, চাপ, হতাশা, বিষন্নতা। এ সময়ে কিশোরকিশোরীরা শিশুদের পর্যায়ে পড়ে না; আবার বড়দের পর্যায়েও পড়ে না। ফলে নিজেদের সামাজিক অবস্থান নিয়ে তারা সবসময় শংকিত থাকে। তাদের কাছ থেকে সমাজের কিছু প্রত্যাশা থাকে, কিন্তু সমাজ কর্তৃক নির্ধারিত কোন আচরণবিধি না থাকায় তারা তাদের আচরণ নিয়ে সবসময় নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে ও উদগ্রীব থাকে।

"মনের কথাগুলো কারও সাথে খোলাখুলি আলোচনা করতে না পারার ফলে মানসিক চাপ বোধ করে। তাদেরকে সঠিকভাবে বোঝাতে না পারার কারণে প্রায়ই অতিরিক্ত রাগান্বিত হয়ে পড়ে। কিশোরকিশোরীদের মধ্যে কঠোরতা, সংর্কীতা, আত্মকেন্দ্রিকতা পরিলক্ষিত হয়। শৈশব থেকে কৈশোরে পদার্পনের পরেও কিশোরদের মধ্যে আদর পাওয়ার আকাঙ্খা রয়ে যায়, কিন্তু পরিবার ও সমাজের কাছ থেকে তারা আগের মত আদর ও মনোযোগ না পাওয়ায় বিষন্নতায় ভোগে। কিশোরকিশোরীরা সমাজে অনেক সময় সাহসী ভূমিকা পালন করতে চায়, কিন্তু বয়সে ছোট হওয়ার কারে সব ধরনের কাজ করার অনুমতি তারা পায় না। ফলে তাদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়।

প্রত্যাহারমূলক মনোভাব কৈশোরকালীন প্রত্যাহারমূলক মনোভাব বলতে বোঝায় একাকী থাকা, নিজেকে সামাজিক কর্মকান্ড থেকে গুটিয়ে নেয়া, নিজের কাজে মগ্ন থাকা ইত্যাদি। এই সময়ে শারীরিক পরিবর্তনের কারে অধিকাংশ কিশোরকিশোরীরা আশেপাশের মানষদের কাছ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিতে চায়। তাদের এই শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনগুলো তারা খোলামেলাভাবে কারো সাথে আলোচনা করতে পারে না। পোশাক পরিচ্ছদে পরিবর্তন আসার কারণে তারা জনসম্মুখে যেতেও ইতস্তত বোধ করে। কিশোরকিশোরীদের মধ্যে এক ধরনের উদগ্রীবতা কাজ করে কার তারা মনে করে আশেপাশের সবাই তাদেরকে লক্ষ্য করছে।

৩) বিদ্রোহী আচরণ

কিশোরকিশোরীদের অবাধ্য আচরণ বলতে তাদের এমন কতগুলো আচরণকে বোঝায় যা সমাজের প্রাগত আদর্শের ব্যতিক্রম। এসময়ে কিশোরকিশোরীরা অধিক স্বাধীনতা অন্বেষ করে এবং নিজের পছন্দমত কাজ করতে চায়; যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সমাজের আদর্শ ভঙ্গের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিদ্রোহমূলক আচরণ কিশোরকিশোরীদের বিকাশকালীন একটি স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য যা সাধারত দুইভাবে প্রকাশিত হয়ে থাকেঃ সমাজ বিরোধী আচররে মাধ্যমেবড়দের প্রতি বিদ্রোহমূলক আচরণের মাধ্যমে এই অবাধ্য আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটে স্কুল পালানো, মাদকসেবন, শিক্ষককে শ্রদ্ধা না করা, বন্ধুদের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে। কিশোরকিশোরীদের বিদ্রোহমূলক আচরণের কিছু সম্ভাব্য কারণ নিম্নে দেয়া হল: আত্মপরিচয় সম্পর্কে সচেতনতা ,স্বনির্ভরশীল হওয়ার প্রবতা, মনোযোগ আকর্ষনের চেষ্টা, বন্ধুদের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া, হরমোনজনিত পরিবর্তন

৪) সহপাঠীর প্রভাব

কৈশোরকালে সামাজিক এবং মানসিক উন্নয়নে তার সহপাঠীর প্রভাব অপরিসীম।এই প্রভাব শৈশবেই শুরু হয় এবং কিশোর বয়সে এর ব্যাপ্তি আরো বেড়ে যায়। একজন কিশোরকিশোরীর জন্য তার বেড়ে ওঠার সাথে সাথে তার সহপাঠীর উপর নির্ভরশীলতা তৈরী হওয়া একটি সুস্থ, স্বাভাবিক এবং গুরুত্বর্পূ প্রক্রিয়া। যখন একজন কিশোরকিশোরী তার সহপাঠীকে অনুসরণ করতে গিয়ে তার নিজের ইচ্ছা এবং আচরণের অনুরূপ পরিবর্তন করে সেই মহূর্তে সেই কিশোরকিশোরীর জীবনে তার সহপাঠীর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। সে সহপাঠীর অনুকরণে কাজ করে কারণ তারা মনে করে তারা যদি এমনটি না করে তখন অন্যান্য সহপাঠীরা তাকে নিয়ে হাসি তামাশা করবে। সহপাঠীর প্রভাব ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয়ই হতে পারে। সহপাঠীর ইতিবাচক প্রভাবে একজন কিশোরের মধ্যে বিভিন্ন অনুকরণমূলক  দক্ষতা যেমনঃ বই পড়া, গান শোনা, ইত্যাদি বৃদ্ধি পেতে পারে। অপরদিকে সহপাঠীর নেতিবাচক প্রভাবে একজন কিশোরের মধ্যে বিভিন্ন ঝঁকিমূলক আচরণ বৃদ্ধি পায়। যেমনঃ ক্লাস ফাঁকি দেয়া, চুরি করা, ধোঁকাবাজি, ধূমপান ইত্যাদি। অনেক কিশোরকিশোরী তার সহপাঠীর প্রভাবের ফলেই/চাপে পড়েই মদ্যপান এবং ধূমপান শুরু করে।

৫) পড়াশোনায় ব্যাঘাত

অধিকাংশ কিশোরকিশোরী তাদের সহপাঠীর কাছে কাজের স্বীকৃতি পাওয়ার ব্যাপারে উদগ্রীব থাকে, কিন্তু কিছু কিশোর সামাজিকভাবে তার সহপাঠীদের মত আচরণ না করার ফলে তাদের দ্বারা  প্রত্যাখ্যাত হয়। সহপাঠীদের দ্বারা বুলিং এবং সামাজিক প্রত্যাখ্যানের মাত্রা যদি বেড়ে যায় তাহলে কিশোরকিশোরীদের মধ্যে নেতিবাচক আচরণের মাত্রা বেড়ে যায়। যার ফলশ্রুতিতে তার পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হয় এবং এতে সে পর্যাপ্ত নম্বর অর্জন করতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রে এসব নেতিবাচক প্রভাবের ফলে সে তার সহপাঠীদের সাথে যথার্থ আচরণ করতে পারে না এবং তার চেয়ে বয়সে ছোট অথবা বড় যে কারো সাথে সে মেলামেশা শুরু করে যে তার অপরিপক্ক আচরণগুলোকে গ্রহণ করে নেয়। এ থেকে সহজেই বোঝা যায় যে, একাডেমিক, সামাজিক এবং পারিবারিক বাধা একজন কিশোরের জীবনকে কতটা দুর্বিসহ করে তুলতে পারে। এসব বাধার ফলে তারা হীনমন্যতায় ভোগে এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশায় পড়ে যায়। এছাড়া কিশোরকিশোরীদের মধ্যে অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক, মাদক সেবন এবং অন্যান্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ বৃদ্ধি পায়।

৬) যোগাযোগের অভাব

কৈশোরকালে কিশোরকিশোরীরা স্বাধীনভাবে নিজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চায়। এসব ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় তারা বড়দের পরামর্শ বা সমর্থন পায় না। এছাড়া অনেক পরিবার এ সময়ে তাদের ছেলেমেয়েদের সাথে খোলামেলাভাবে কথা বলতে সংকোচবোধ করে। কিছু বাবা মা এ সময়ে সন্তানদের সাথে আলোচনা না করে যেকোন ধরনের সিদ্ধান্ত তাদের উপর চাপিয়ে দেয়। এমন সময় কিছু ছেলেমেয়েরা এতটাই আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে যে তারা বাবামায়ের যথার্থ উপযুক্ত সিদ্ধান্তকেও মেনে নিতে পারে না এবং বাবামায়ের বিরোধীতা করে। এভাবেই সঠিক যোগাযোগের অভাবেই বাবামা এবং সন্তানের মধ্যে এ দূরত্বের সৃষ্টি হয়।

৭) প্রাতিষ্ঠানিক সফলতা অর্জনে জটিলতা

কিশোর বয়সে ছেলেমেয়েদের মধ্যে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন দেখা যায়। তাদের মধ্যে আবেগীয় পরিবর্তন খুব  বেশি পরিলক্ষিত হয়। পরিবার, সমাজ, বন্ধুবান্ধবের সাথে তাদের আচরণে পরিবর্তন আসে যা তাদের শিক্ষার উপর প্রভাব বিস্তার করে। নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করে তারা। বিভিন্ন পরিবর্তনের কারণে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করে তারা। বিভিন্ন পরিবর্তনের কারণে নিজেকে কখনও বড়দের মত আবার কখনও ছোটদের মত প্রকাশ করতে চায়।

এই ধরনের পরিবর্তন তাদের মধ্যে চাপ, দ্বন্দ্ব, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি সৃষ্টি করে। পরিবার ও সমাজ তাদের প্রতি প্রত্যাশা বাড়িয়ে দেয়। একজন ছেলে বা মেয়ে শৈশবে যে ফলাফল অর্জন করত, কৈশোরকালীন পরিবর্তনের ফলে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক ফলাফলে পরিবর্তন চলে আসতে পারে। 

বাবা-মা, শিক্ষক-শিক্ষিকা এই ধররে পরিবর্তন সহজে মেনে নিতে পারেন না; ফলে ছেলেমেয়েদেরকে অনেক সময় বকাঝকা করেন।ফলে অনেক শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার প্রতি অনীহা চলে আসে এবং প্রাতিষ্ঠানিক ভাল ফলাফল ধরে রাখা কষ্টকর হয়ে যায় তাদের জন্য। 

অনেক কিশোরকিশোরীদের মধ্যে অন্যের মনোযোগ লাভের প্রবতা দেখা যায়। শ্রেণীতে ভাল অবস্থান ধরে রাখার জন্য অনেকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করা শুরু করে। সব কিছুতেই সর্বোত্তম অবস্থান ধরে রাখতে গিয়ে নিজের প্রতি যত্নের ব্যাপারে উদাসীন হয়ে পড়ে। অত্যধিক চাপের কারণে অনেকেই শারীরিক ও মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে।

৮) মাদক গ্রহণ ও অন্যান্য আসক্তি

কিশোর বয়সের একটি বড় জটিলতা হল আসক্তি। বন্ধুবান্ধবের চাপে, পারিবারিক অশান্তি, অগ্রহযোগ্যতা, হীনমন্যতা, হতাশা ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে কিশোরকিশোরীরা অনেক সময় মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। ধূমপান, অ্যালকোহল আসক্তি, মাদক গ্রহণ, পর্নোগ্রাফি, ঝুঁকিপূর্ণ যৌন সম্পর্ক স্থাপন ইত্যাদির প্রতি অনেক কিশোরকিশোরী আসক্ত হয়ে পড়ে।যা তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে তুলতে পারে।

৯) সিদ্ধান্ত গ্রহনে জটিলতা

কিশোর বয়সের অন্যতম জটিলতা হল সিদ্ধান্ত গ্রহনে জটিলতা। পড়াশুনা, ক্যারিয়ার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে অনেকেই সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। উদাহরস্বরূপ নবম শ্রেণীতে উঠে একজন ছাত্র/ছাত্রী বিজ্ঞান, মানবিক কিংবা ব্যবসায় কোন বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করবে, ভবিষ্যতে কোন পেশায় নিয়োজিত হবে, এসব বিষয় নিয়ে অনেক সময় বাবামা ও সন্তানের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় এবং সন্তান সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। 

এই বয়সে শারীরিক পরিবর্তনের কারে পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রেও কিশোরকিশোরীদের সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে দেখা যায়। অনেক সময় বন্ধুবান্ধব নির্বাচন করার ব্যাপারেও তারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। এই বয়সে কিশোরকিশোরীদের মধ্যে আরও কিছু মনোসামাজিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এই পরিবর্তনগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো। 

১০) শান্তি এবং সংঘর্ষ 

আমরা আমাদের জীবনের বিভিন্ন ধাপে নানা ধরনের সংঘর্ষের সম্মুখীন হই। এই সংঘর্ষ ফলপ্রসূভাবে মোকাবিলা করা না হলে তা আমাদের জীবনে সফলতার পথে বাঁধা হয়ে দাড়ায়। সংঘর্ষ আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ কারণ আমরা প্রতিটি মানুষ সবসময় কোন একটি বিষয়ে একমত পোষন নাও করতে পারি। যেহেতু সংঘর্ষ জীবনে থাকবেই তাই একে মোকাবেলা করার দক্ষতা সবারই থাকা প্রয়োজন। জীবনের অন্যান্য দক্ষতার মত এটাও একটি অত্যন্ত গুরুত্বর্পূ দক্ষতা। আমাদের জীবনে বিদ্যমান সংঘর্ষগুলোকে প্রতিরোধ,মোকাবেলা করা এবং তীব্রতা কমিয়ে আনাকেই শান্তি বোঝায়। শিশুরা নিজেদেরকে অনিরাপদ স্থানে আছে বলে বিবেচনা করে তাই তারা তাদের বন্ধুদের সাথে খুব সহজেই সংঘর্ষ জড়িয়ে পরে। কিশোর বয়সে কিশোরকিশোরীরা তাদের আবেগ প্রকাশের জন্য অন্যকে উত্ত্যক্ত করা, পরিচর্চা করা এবং শারীরিক শক্তি প্রদর্শনকে বেছে নেয়। কিশোরকিশোরীদেরকে সংঘর্ষ মোকাবেলার দক্ষতা শেখানো হলে সমাজ অনেক ধরনের সহিংসতা ও অপরাধমূলক কর্মকান্ড থেকে রক্ষা পাবে। আমরা সংঘর্ষ মোকাবেলা করার দক্ষতা প্রয়োগ করার মাধ্যমে অনেক ধরনের উপকারিতা পেতে পারি। 

o   সর্বত্র শান্তির্পূণ পরিবেশ বিরাজ করবে

o   লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে

o   সম্পর্ক তৈরি এবং রক্ষা করতে সহায়তা করবে

o   প্রতিশ্রুতি রক্ষায় সহায়তা করবে

o   ব্যক্তি তার নিজের মতামত প্রকাশের পাশাপাশি অন্যের মতামতের প্রতি সহনশীলতা ও সম্মান প্রদর্শনের মত পরিবেশ তৈরি হবে

o   ব্যক্তির জ্ঞান, দক্ষতা, ইতিবাচক মনোভাব বৃদ্ধি এবং আচরণগত পরিবর্তনের মাধ্যমে যে কোন সমস্যা সৃজনশীলতার সাথে শান্তির্পূভাবে সমাধানের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে বিপজ্জনক পরিস্থিতি সনাক্তকর এবং মোকাবেলা করার দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে

o   বন্ধুদের নেতিবাচক প্রভাব থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সহায়তা করবে সমাজের নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ড প্রতিরোধে অবদান রাখতে পারবে

১১) চরমপন্থী আচরণ

চরমপন্থী আচরণ হলো দেশের প্রচলিত মূল্যবোধ, আইন, ব্যক্তি স্বাধীনতার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মৌখিক অথবা কাজের মাধ্যমে বিরোধিতা প্রকাশ করা। কিছু কিছু চরমপন্থী ব্যক্তি রয়েছে যারা কিনা সমাজে খুব ভঙ্গর অবস্থায় থাকে, নিজেকে গুটিয়ে রাখে, এবং প্রতিদিনকার কাজ কর্মে অংশগ্রহণ করে না। এরা সাধারনত এদের রাগ, অপ্রাপ্তি, গভীর দুঃখ চরমপন্থী আচরণের মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকে। যেমন ভিন্ন মতাবলম্বীদের প্রতি সহিংসতা, খুন ও অশ্রদ্ধা প্রকাশ করা। চরমপন্থা তখনই হয় যখন কেউ সমাজের বেশিরভাগ লোককেই অযৌক্তিক ও অগ্রহযোগ্য মনে করে। চরমপন্থীরা প্রচন্ডরকম ভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিশ্বাসে বিশ্বাসী। সহিংস চরমপন্থী আচরণ হলো যখন একজন ব্যক্তি অথবা দল তাদের মতাদর্শ, প্রত্যাশিত রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন আনয়নে ভয়ভীতি প্রদর্শন, অস্থিরতা এবং সহিংস আচরণ করে থাকে। ধর্মীয় গোঁরামী হলো নিজের ধর্মের প্রতি/দলের প্রতি অদম্য নিষ্ঠা যা শুধু নিজের ধর্মের লোকদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব প্রকাশ করে। উদাহরস্বরূপ চাকরির নিয়োগের ক্ষেত্রে নিজ ধর্মের লোককে প্রাধান্য দেয়া।

আত্মপরিচয়ের অভাব চরমপন্থীমলক আচরণের সাথে সম্পর্কিত। এর ফলে ব্যক্তির মধ্যে আত্মধংসাত্মক আচরণও নিজের প্রতি ঘৃনা সৃষ্টি করে যা তার মধ্যে প্রতিশোধের অনভূতি জাগ্রত করে ও নিজের মানবিকতাকে হত্যার দিকে পরিচালিত করে। চরমপন্থীতাকে না কোন কৌশল হিসাবে , না কোন একটি মতাদর্শ হিসাবে দেখা হয়, তবে এটাকে একটা অস্বভাবী ব্যাধি (Pathological Disorder) হিসেবে দেখা হয় যা জীবনের জন্য ধ্বংসস্বরূপ এবং এাঁ নিরাময়যোগ্য। অন্য কথায় বলা যায়, চরমপন্থীতা হলো এক ধররে আবেগীয় অবস্থা যা নিপীড়ন, নিরাপত্তাহীনতা, অপমান, অসন্তুষ্টি, ক্ষোভ এবং ক্ষোভের ধারাবাহিকতা থেকে উদ্ভুত যা ব্যক্তি বা দলের দ্বন্দ্বের সাথে সম্পর্কিত। অনেক সময় সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্য থেকে দূরে সরে যাবার কারণে কিশোর কিশোরীরা নিজেদেরকে সমাজ বিচ্ছিনড়ব বলে মনে করে। পরিবার থেকে বিচ্ছিনড়বতা, আত্মবিশ্বাসের অভাব, নতুন ও উত্তেজনার্পূণদলের প্রতি ঝোঁক, মনের মধ্যে নতুন বিশ্বাস ও বন্ধু নির্বাচন বিষয়ক নানা প্রশ্নের উদ্ভবের কারণেও এই ধরনের সহিংস আচরণের প্রতি আকর্ষণ বোধ করতে পারে। এছাড়াও এক দেশ থেকে অন্য দেশে বিতাড়িত, সামাজিক কোন সংকট, নিজেকে অবিচারের স্বীকার বলে মনে করা এর পেছনে দায়ী।

·        মূলবার্তা

সংঘর্ষ আমাদের জীবনের একটি অংশ। সংঘর্ষ মোকাবিলা করতে পারা একটি গুরুত্বপূর্ণ জীবন দক্ষতা। চরমপন্থিতা হলো শান্তির বিপরীত, যার ফলে সমাজে নানা ধরনেরর অশান্তি তৈরি হয়। সংঘর্ষ মোকাবিলা করার দক্ষতার দ্বারা ব্যক্তি তার মূল্যবোধ, মনোভাব ও আচরণে পরিবর্তন আনতে পারে। পাশাপাশি অন্যের মূল্যবোধ ও মনোভাবের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে কাঙ্খিত শান্তি আনয়ন করতে পারে।

 

Login Form

Not a member, please Sign-Up first

Sign-Up Form

Copyright © 2023 , All rights reserved DGFP and supported by UNICEF

  • img
  • img
  • img